Know to Conserve

 
All Post
 

জীববৈচিত্রের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ


জীববৈচিত্র হল জীবনের ভিন্নতা যা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র বিভিন্ন বাসস্থানে  ছড়িয়ে আছে।তবে সকল সাথে প্রাণীর ঘনত্ব এবং পরিমাণ একই রকম নয়। এই বৈচিত্রকে জিনগত বৈচিত্র, প্রজাতিগত বৈচিত্র বাস্তুসংস্থানগত বৈচিত্র এই তিনভাগে হিসেবে ভাগ করা যায়। জিনগত বৈচিত্রই হল প্রজাতিগত বৈচিত্রের উৎস যা একটি প্রজাতির জনসংখ্যার নিজের ভিতর বা মধ্যকার উভয় পর্যায়ে ঘটে। বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস এর সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ১৪-১৬ লক্ষ প্রজাতি নামকরণ বর্ণনা করা হয়েছে এবং প্রতিবছর আরো নতুন নতুন ১৫,০০০ হাজার প্রজাতি আবিস্কৃত হচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন হল এই পৃথিবীতে কত সংখ্যক প্রজাতি আছে ?

পৃথিবীতে প্রজাতির সংখ্যা নির্ণয় বা অনুমানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি আছে। ১৮টি ট্যাক্সোনমিক শ্রেনীর উপর অধিক লক্ষস্থির করে সংখ্যাতাত্ত্বিক হাইপোথিসিস পদ্ধতিতে প্রায় ৮৭ লক্ষ (. মিলিয়ন) প্রজাতির অনুমান করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে প্রকৃতিকোষী জীবের সকল কিংডম রাজ্য। ধারণা করা হয় ৭৭,৭০০ প্রজাতির প্রাণী, ২৯৮,০০০ প্রজাতির বৃক্ষ, ৬১১,০০০ প্রজাতির ছত্রাক, ৩৬,৪০০ প্রজাতির প্রোটোজোয়া ২৭,৫০০ প্রজাতির ক্রমিস্ট পৃথিবীতে রয়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র প্রকৃতিকোষী জীবের ১২ লক্ষ জীব নামকরণ ক্যাটাগরীভুক্ত করা হয়েছে যা মোট অনুমানের মাত্র %।। তাহলে এখনো প্রায় ৯১% প্রজাতি আবিষ্কারের অপেক্ষায় রয়েছে।

জীববৈচিত্র সংরক্ষণ বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন প্রজাতি বর্ণনা এবং তাঁদের অন্তঃপ্রজাতিক আন্তঃপ্রজাতিক সম্পর্ক্য নির্ণয়ে পৃথিবীর নানান প্রান্তে শ্রেণিবিন্যাসবিদরা কাজ করে যাচ্ছেন। এই কাজের জন্য তারা প্রজাতির ডাটাবেজ, ফিল্ড গাইড, নমুনা সংগ্রহ, রেফারেন্স বই ব্যবহার করছেন যা বাস্ততন্ত্রের স্বাস্থ্য দেখাশোনা করা,সমস্যা নির্ণয় ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করছে। জীববৈচিত্র বিশ্লেষণের এই জ্ঞান একটি নির্দিষ্ট বাস্তুসংস্থায় প্রজাতিদের স্থানগত সময়গত পরিবর্তন নির্ণয়ে গবেষকদের সাহায্য করে। এর ফলে জীববৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য একটি নির্দিষ্ট বাসস্থান ব্যবস্থাপনা করার জন্য সেখানকার প্রধান প্রধান প্রজাতি নির্দেশক প্রজাতিসমূহ নির্ণয়ে সহায়তা করে। প্রথাগত বাহ্যিক অঙ্গসংস্থানভিত্তিক এই শ্রেণীকরণ পদ্ধতি খুব ধীরগতির কয়েকটি বিশেষ গ্রুপের উপর লক্ষ করে করা হয়। কিন্তু বর্তমানে ডিএনএ ভিত্তিক সনাক্তকরণ পদ্ধতি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছে যার মাধ্যমে দ্রুত, সঠিকভাবে অধিক সংখ্যক তথ্য আরোহণ করা সম্ভব।

সংরক্ষণ জীববিদ্যায় বিশেষ করে শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যায় প্রজাতি শনাক্তকরণে ডিএনএ বারকোডিং  একটি অভুতপূর্ব পদ্ধতি যা খুব দ্রুতসময়ে সঠিকভাবে একটি প্রজাতি সনাক্তকরণের তথ্য দেয়। ডিএনএ বারকোডিং একটি আদর্শ সংক্ষিপ্ত ডিএনএ সিকোয়েন্স বৈশিষ্ট্যের কী বা চাবি হিসেবে ব্যবহৃত হয় প্রজাতি শনাক্তকরণ নতুন প্রজাতি আবিষ্কারের জন্য। এটা আরো উন্মোচন করে অধিকসংখক রহস্যপূর্ণ প্রজাতি যারা বাহ্যিকভাবে একইরকম এবং লিঙ্গের দিকে অনেক মিল ছিল। প্রেরণা দেয় নতুন প্রজাতি শনাক্তকরণে যাদের বাহ্যিকভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা অনেক কঠিন  ছিল।

 ডিএনএ বারকোডিং সাইটোক্রোম সি ওক্সিডেজ-১অঞ্চলের ৬৪৮ টি নাইট্রোজেন বেস জোড়া ব্যবহার করা হয়। সাইটোক্রোম সি ওক্সিডেজ-১অঞ্চলের  জিন অঞ্চল অনেক ছোট কিন্তু প্রাণী প্রজাতিদের মধ্যে অনেক বৈচিত্রময়। কাকতলীয়ভাবে এই পদ্ধতি ক্যারোলাস লিনিয়াসের শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতিকে অনেক বেশী যুক্তিযুক্ত করে। এছাড়াও এটি সাহায্য করে বাস্তবিদ্যার গবেষক, সংরক্ষণবিদ্যার গবেষক এবং সেই সকল সংস্থাকে যারা আগাছা বালাই দমন, আগ্রাসী প্রজাতি দমন খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে।

   

 

চিত্রঃ প্রাণী কোষের ভিতর বারকোডিং জিন এর অবস্থান (প্রথম ছবি) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে শ্রেণীবিন্যাস বিদ্যার প্রয়োজীয়তা (দ্বিতীয় ছবি)।

জীববিজ্ঞানে অনেক শাখা রয়েছে যেখানে শ্রেণিবিন্যাস মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। অতীত বর্তমানের বিভিন্ন সময়ে প্রজাতিদের বৈচিত্রের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক্যের তথ্য শ্রেণিবিন্যাসবিদরা সমন্বয় করেন। বাস্তুতান্ত্রিক পরিবর্তনের ফলে আমরা পৃথিবীতে অনেক আগ্রাসী প্রজাতি দেখতে পাই।  এটা এন্ডেমিক এবং স্থানীয় উদ্ভিদ প্রাণীর অন্যতম একটি বড় হুমকি। আগ্রাসী প্রজাতি নির্ধারণ পদ্ধতি প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ক্ষতিকর প্রজাতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এখন এন-সিটু সংরক্ষণ ন্যাশনাল পার্ক উন্নয়নে আমাদের শুধু কিছু নির্দিস্ট প্রজাতির শ্রেণীবিন্যাস জ্ঞান প্রয়োজন।

শ্রেণিবিন্যাস জ্ঞান ব্যবহার করে কোন একটি বাস্তুসংস্থার অবস্থা মূল্যায়ন করে মানুষের জন্য কোনটি ভাল কল্যাণকর তা নির্ধারণে প্রকৃতি সংরক্ষণবিদদের সাহায্য করে। আমরা যদি বর্তমান অবস্থার কথা চিন্তা করি দেখা যাবে যে বাসস্থান ধ্বংস, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অতিরিক্ত চাপ, প্রাকৃতিক সম্পদ অতিরিক্ত আরোহণ, দূষণ এবং আগ্রাসী বিভিন্ন প্রজাতির কারণে প্রতি আটিটি পাখির মধ্যে একটি, প্রতি চারটি স্তন্যপায়ীর মধ্যে একটি, প্রতি তিনটি উভচর এর মধে একটি এমনকি প্রতি সাতটি সামুদ্রিক কচ্ছপের মধ্যে ছয়টিই আজ  বিলুপ্তির মুখে। আজ  পর্যন্ত আমাদের কাছে পর্যাপ্ত শ্রেণিবিন্যাস জ্ঞান নেই যার দ্বারা প্রাকৃতিক বাসস্থানের একটি নির্দিষ্ট বাস্তুসংস্থার বিভিন্ন প্রজাতি সংরক্ষণে কোন বিশেষ পদক্ষেপ নিতে পারি। কিন্তু আমরা যদি সমগ্র পৃথিবীর সকল বাস্তুসংস্থান নিয়ে গবেষণা করতে চাই তাহলে পরবর্তী ৫০ বছরের জন্য কমপক্ষে ২০ বিলিয়ন ডলার শ্রেণিবিন্যাসবিদদের জন্য বরাদ্ধ করতে হবে যাতে ৫০ লক্ষ  নতুন প্রজাতি সনাক্ত করা যায়। কিন্তু বর্তমানে প্রজাতি বর্ণনা করার জন্য কোন গবেষণা তহবিল কার্যত নেই বললেই চলে।

তথ্যসূত্র

Brunswick N (2012) Biomonitoring 2 . 0 : a new paradigm in ecosystem assessment made possible by next-generation DNA sequencing. Mol Ecol 21, 2039–2044

Gaston KJ (2000) Global patterns in biodiversity. Nature 405, 220-227.doi:10.1038/35012228

Hebert PDN, Gregory TR (2005) The promise of DNA barcoding for taxonomy. Syst Biol 54:852–9. doi: 10.1080/10635150500354886

Hilty J, Merenlender A (2000) Faunal indicator taxa selection for monitoring ecosystem health. Biol Conserv 92:185–197. doi: 10.1016/S0006-3207(99)00052-X

Janzen DH, Hajibabaei M, Burns JM, et al (2005) Wedding biodiversity inventory of a large and complex Lepidoptera fauna with DNA barcoding. Phil. Trans. R. Soc. B 360, 1835–1845 doi:10.1098/rstb.2005.1715

Millenium Ecosystem Assessment (2010) Ecosystems and Human Well-Being: Biodiversity Synthesis. World Resources Institute 285, 30-42. doi: 10.1057/9780230625600

Mora C, Tittensor DP, Adl S, et al (2011) How many species are there on earth and in the ocean? PLoS Biol 9:1–8. doi: 10.1371/journal.pbio.1001127

Morinière J, Araujo BC De, Lam AW, Hausmann A (2016) Species Identification in Malaise Trap Samples by DNA Barcoding Based on NGS Technologies and a Scoring Matrix. PLoS ONE 11(5): e0155497. doi: 10.1371/journal.pone.0155497

Stork NE (1993) How Many Species Are There. Biodivers Conserv 2:215–232. doi: 10.1371/journal.pbio.1001127

Stork NE (1988) Insect diversity: facts, fiction and speculation. Biol J Linn Soc 35:321–337. doi: 10.1111/j.1095-8312.1988.tb00474.x

Swartz ER, Mwale M, Hanner R (2008) A role for barcoding in the study of African fish diversity and conservation : review article. S Afr J Sci 104:293–298.

Yoccoz NG (2012) The future of environmental DNA in ecology. Mol Ecol 21, 2031–2038

 

মো: শফিকুল ইসলাম, গবেষক, জার্মান বারকোড অফ লাইফ, মিউনিখ, জার্মানি

 মো: মাইন উদ্দিন, প্রভাষক, নরসিংদী সরকারি কলেজ (৩৪ বি সি এস), বাংলাদেশ 

অমিত কুমার নিয়োগী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ 

 

 

 
Flag Counter